নিজস্ব প্রতিবেদক॥
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর গত দুই দিন ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তার অসুস্থতা এবং ইসি পুনর্গঠন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
সিইসির অনুপস্থিতি নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন: তিনি কি সত্যিই অসুস্থ? কবে তিনি অফিসে ফিরবেন? নির্বাচন কমিশন কবে নাগাদ পুনর্গঠিত হবে? পুনর্গঠনের পর বর্তমান সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের ভবিষ্যৎ কী? বর্তমান কমিশন বহাল থাকবে, নাকি সম্পূর্ণ নতুন কমিশন গঠিত হবে—এইসব প্রশ্নই এখন ইসির অন্দরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার অফিসে না এলেও নির্বাচন কমিশনাররা অন্যতম নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাসউদের কক্ষে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। সচিবকেও গতকাল ইসির বাইরে অনেকটা সময় দেখা গেছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন কেমন হবে, কে সিইসি হবেন, বা কারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাবেন—এসব নিয়ে দিনভর আলোচনা হয়েছে ইসির কার্যালয়ে।
সিইসির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সিইসি বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, “আমাদের সবার প্রত্যাশা সিইসি দ্রুত সুস্থ হয়ে অফিসে আসবেন।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসউদ, সাবেক যুগ্মসচিব বেগম তাহমিদা আহমদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে বেছে নেন, এবং গত বছরের ২১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাদের নাম প্রকাশ করে। ২৪ নভেম্বর সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন ও চারজন নির্বাচন কমিশনার শপথ গ্রহণ করেন।
দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাসির উদ্দিন একসময় সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর তাকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য করা হয় এবং পরে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। তবে এর আট মাসের মাথায় গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।