রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন
১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম :
পদত্যাগের গুঞ্জন নাকচ দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিপদেও আছে কল্যাণ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি, তিন উপদেষ্টার অব্যাহতি দাবি সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সরকারের “ব্যাংক হোক মাইক্রোক্রেডিট”: ড. ইউনূসের স্বীকারোক্তি না সংকেত, নাকি দেরিতে জাগা বিবেক? চাঁদা দাবির অভিযোগে বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার সালথায় ৭০০ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, মন্তব্য প্রেস সচিবের লেয়ারিংয়ের জালে পাচারের অর্থ ফেরত আনা কঠিন খুনের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পী মমতাজ

পদত্যাগের গুঞ্জন নাকচ দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
  • ৩ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না। গতকাল (২৪ মে) আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত সভায় তিনি নিজেই এই ঘোষণা দিয়েছেন। সভায় ১৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার পদত্যাগের গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, “আমরা তো এখানে নিজ থেকে দায়িত্বে আসিনি। আমাদের ছাত্ররা ডেকে এনেছেন। আর জুলাই অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং যারা এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের কথামতো আমরা দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিয়েছি। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি আমাদের সরানোর জন্য নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারাই আমাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এতে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা এলেও সেগুলো প্রতিরোধ করে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে একটি সুন্দর অবস্থানে নিতে হলে এই সংস্কার কার্যক্রমগুলো শেষ করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

রাজনৈতিক চাপ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চাপ রয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে চাপ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব এবং উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়েও চাপ রয়েছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি তার আগের অবস্থানেই অনড় থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় উপদেষ্টাদের মধ্যে মৃদু তর্কবিতর্ক হয়। একজন প্রবীণ উপদেষ্টা ছাত্রদের অবমূল্যায়ন না করার পরামর্শ দেন এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে ছাত্রদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার কথা বলেন। তবে অন্য একজন উপদেষ্টা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন যে, নাহিদ ইসলাম আগেই পদত্যাগ করেছেন এবং বাকি দুজন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং মানবিক করিডর নিয়ে কথা বলেন।

ড. ইউনূস সব উপদেষ্টাকে ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ব্রিফিং
সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, “প্রধান উপদেষ্টা যাচ্ছেন না, তিনি চলে যাবেন বলেননি, অবশ্যই থাকছেন। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বড় দায়িত্ব, এ দায়িত্ব ছেড়ে আমরা যেতে পারব না। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।” তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন এবং একটা সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার, সে কাজেও কোথা থেকে কী কী প্রতিবন্ধকতা আসছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।” তিনি সব রাজনৈতিক দল, দেশের প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং বিভিন্ন সংস্থাকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি
উপদেষ্টা পরিষদ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব— নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার— বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশ স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং স্বৈরাচারের আগমন প্রতিরোধ করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন ও অন্যান্য আলোচনা
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি তার বাইরে যাবে না। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এক কথার মানুষ এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে জামায়াত ও এনসিপি সমর্থন জানিয়েছে।

গতকাল রাতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জোর দিয়েছে এনসিপি এবং আওয়ামী লীগ আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। জামায়াত ও এনসিপি মনে করে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্ভব নয় এবং তারা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে।

শফিকুল আলম আরও জানান যে, জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া এই মাসেই শুরু হবে। বিএনপির প্রতিনিধিরা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে কয়েকজনের পদত্যাগের কথা বললেও, সে বিষয়ে কেবল শোনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত দলগুলোর শীর্ষ নেতারা নির্বাচন আয়োজন, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারে ইতিবাচক ভূমিকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও প্রেস সচিব জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102