নিজস্ব প্রতিবেদক॥
ঢাকা: আগামী ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।একই সাথে দলটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা- আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।গতকাল (বৃহস্পতিবার) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব দাবি জানান। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সরকারের সহযোগিতা:
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে দ্রুত একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ লক্ষ্যে তিনি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এ সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তিন উপদেষ্টার অব্যাহতি কেন?
বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।একই সাথে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে তার সাম্প্রতিক বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই যেহেতু এই সরকারের প্রধান কাজ, তাই রুটিন কাজ পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।
ঐক্যে ফাটল ও সরকারের ম্যান্ডেট :
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিজয়ী হয়েছে। তবে গত সাড়ে ৯ মাসে জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী অস্থায়ী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। অথচ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, এ সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে।
জাতীয় স্বার্থ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত :
মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কিনা, তা বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি প্রশ্ন তুলেছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী অস্থায়ী সরকারের আছে কি না। দেশের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশন ও ইসরাক হোসেন
নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে বিব্রতকর মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরির প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও একই বিষয় নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি সরকার ও বিএনপি উভয়কে বিব্রত করেছে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে বিএনপির মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র-সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে। সুতরাং আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সরকার অতি শিগগিরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন আহমেদ।