শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন
২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম :
জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরাম (জিসফ) এর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ফরিদপুর শাখা আহ্বায়ক কমিটি গঠিত কবিতা-১ ও কবিতা-২ ফরিদপুরে আ.লীগ বিএনপি সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন সালথায় বিএনপির পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্তু বিতরণ ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিত করার দায় ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির আজহারীর বয়ান শুনলেন লাখ লাখ মানুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক বিডিআরএমজিপি এফএনএফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ

সালথায় শিক্ষা কর্মকর্তার পকেটে স্কুল সংস্কারের অর্ধকোটি টাকা

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ Time View

মজিবুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ॥

সালথায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার করার নামে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।ফরিদপুরের সালথা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গত দেড় বছরে বরাদ্দ পাওয়া স্কুলগুলোর মেরামত ও সংস্কার না করেই শুধু কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্কুল শিক্ষকদের জিম্বি করে তাদের কিছু ‘খরচের টাকা’ হাতে ধরিয়ে দিয়ে দিয়ে বাকি টাকা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের পিই ডিপি ফোরের আওতায় এডুকেশন ইন ইমার্জেন্সি খাত থেকে ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত বাবদ ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।এর মধ্যে বড়খারদিয়া দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, ইউসুফদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার, শাহ সিরাজ কাগদী বাতাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, মাঝারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ও রংরায়েরকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ারা হোসেন সবুরননেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া গত দুই বছরে স্লিপ প্রকল্প থেকে ৭৬টি স্কুলের প্রতিটি স্কুলে ১ লাখ থেকে ২ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বছরও ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৫টি স্কুলে ২ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক স্কুলে নতুন কেন্দ্র বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।সম্প্রতি বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, কোনো স্কুলেই মেরামত ও সংস্কার কাজ হয়নি। স্লিপ প্রকল্পের আওতায় করা সামান্য রংচংয়ের কাজ দেখিয়ে সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে বলে দাবি করেন কয়েকজন শিক্ষক। তবে সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী একুশের চেতনাকে বলেন, আমার স্কুলে সংস্কার ও মেরামত বাবদ কোনো বরাদ্দই দেওয়া হয় নাই। আমাকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে শিক্ষা অফিস। বাকি টাকার খবর জানিনা শিক্ষা অফিস জানে।

তাহলে আপনার স্কুলের মেরামতের বরাদ্দের তিন লাখ টাকা কোথায় গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না। মাত্র ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি বাকিটা শিক্ষা অফিস ভালো বলতে পারবেন, আপনি সেখান থেকে জেনে নিন।

শাহ সিরাজ কাগদী বাতাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কর বলেন, আমার স্কুলে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু আমি হাতে টাকা পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার। বাকি টাকা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক সমিতির নেতারা নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন,আমি যে টাকা পেয়েছি সেই টাকার কাজও করেছি।

বড়খারদিয়া দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইবাদত আলী প্রথমে বলেন, আমি মাত্র ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বলেন, আমি ভ্যাট বাদে বরাদ্দের সব টাকাই পেয়েছি, কাজও করেছি। তবে ভ্যাট বাদে কত টাকা পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এমনকি তার স্কুলে সংস্কারের কোনো কাজও দেখাতে পারেননি তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরাদ্দ পাওয়া এসব স্কুলের একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর আগে শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান সালথায় যোগদান করেছেন। তার চাকরির বয়স আছে আর মাত্র কয়েকমাস। তাই চাকরির শেষ সময়ে এসে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্কুলের প্রতিটি কাজে আমাদের অনিয়ম-দুর্নীতি করাতে বাধ্য করেন তিনি।

তারা আরো বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা সব সময় মুখে সততার গল্প করলেও ঘুষ-বাণিজ্য ছাড়া কোনো কাজই করেন না। চলতি বছরে স্কুল মেরামত ও সংস্কার বরাদ্দের কিছু টাকা পেয়েছে শিক্ষকরা। কোনো কোনো স্কুলে টাকাই পাইনি।বাকি সব টাকা শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি আগে থেকে শিক্ষকদের সাথে দেন-দরবার করে নেন। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, তারাই মেরামত ও সংস্কার কাজের বরাদ্দ পেয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা দায় এড়াতে অত্যন্ত সুকৌশলে শিক্ষকদের দিয়ে কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে বিলের চেক প্রস্তুত করেন।পরে ভ্যাট বাদে সেই চেকের পুরো টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে তুলে নেন। ফলে কোনো স্কুলে কাজ হয়নি।

শিক্ষকরা বলেন, বরাদ্দের প্রায় সব টাকাই যদি শিক্ষা কর্মকর্তার পকেটে যায়, তাহলে কাজ হবে কিভাবে? শুধু তাই নয়, বরাদ্দের টাকা থেকে ভ্যাট কাটায়ও অনিয়ম করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ১৮ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে নিয়েছেন।এই খাতেই অন্তত তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে নতুন কেন্দ্র বাবদ সালথায় ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে বলে জানতে পেরেছি। এই টাকাও তিনি কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে পকেটে ঢুকিয়েছেন। তাছাড়াও ৭৬টি স্কুলের স্লিপ প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ৫ হাজার টাকা করে কমিশন নিয়েছেন শিক্ষা অফিস।

তাতে গত দুই বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একাধিক স্কুলের সরকারি গাছ নামমাত্র দাম দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করে পকেট ভারি করার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তা বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে স্কুলের এসব বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সালথা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, স্কুল সংস্কার ও মেরামত বরাদ্দের টাকা আমার খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।বরাদ্দকৃত স্কুলের টাকা তাদের একাউন্টে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছিল। সেগুলো পরে ঠিক করা হয়েছে। আর স্লিপ প্রকল্প থেকে কোনো কমিশন নেওয়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, এসব বরাদ্দের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমাকে জানানোও হয়নি। তবে আমি খোজ-খবর নিয়ে দেখব, কাজ হয়েছে কি না। পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়মের বিষয়টিও খতিয়ে দেখবো। যদি অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে বিষয়টি ডিসি স্যারকে জানানো হবে।

ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দীন বলেন, এসব অনিয়মের বিষয় আমার জানা নেই। তবে শিক্ষকরা যদি লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102