মো. তৌহিদুল ইসলাম, কলাপাড়া-কুয়াকাটা প্রতিনিতি ॥
সাগরে মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বাড়াতে শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা পালনে ইতোমধ্যে কুয়াকাটা উপকূল এলাকাসহ মৎস্য বন্দর আলিপুর-মহিপুরের জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। কিছু জেলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সাগরে মাছ শিকার করছেন না।
সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘোষিত ৬৫ দিনের সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে শনিবার রাত ১২টায়। এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকবে রবিবার (২৩ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত।
বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সঙ্কটে! একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমে সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। এদিকে দীর্ঘ দিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ৬৫ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে।
সমুদ্রে বর্তমানে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল হওয়ায় বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন নদীর মোহনায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
জেলে মামিন ইসলাম জানান,,ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর লোন টাহার ঋণ লইয়া মানষিক দুশ্চিন্তায় মোর চোঁহে ঘুমে ধরে না। আর মহাজনের দাদনের টাহা কেমনে পরিশোধ করমু। এহন হতাশ অইয়া গেছি।
মাঝি আফসার জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে। অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। তারা আরও দাবি করে বলেন, সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবার সহ ভারতের সময়সীমার সাথে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেয়া হয়।
বাবা-মায়ের দোয়া ফিস পান্না হাওলাদার জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।
ট্রলারের মালিক কামাল জানান, জমি জমা বিক্রি করে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বর্তমানে এই ট্রলার বিক্রি করে মানুষের ধার দেনা দিয়েছি।
এখন মাছের ব্যবসা ছেড়ে নিজের অল্প কিছু জমি আছে তাতে কৃষিকাজ করি।
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন সময় এখনো থেকে দেড় মাস বাকি। তাই আমাদের দাবি এই ৬৫ দিনের অবরোধ একমাস পিছিয়ে দেওয়া মাছের প্রজননের সঠিক সময় দেওয়া হোক হোক।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জেলেদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।