শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন
২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম :
জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরাম (জিসফ) এর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ফরিদপুর শাখা আহ্বায়ক কমিটি গঠিত কবিতা-১ ও কবিতা-২ ফরিদপুরে আ.লীগ বিএনপি সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন সালথায় বিএনপির পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্তু বিতরণ ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিত করার দায় ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির আজহারীর বয়ান শুনলেন লাখ লাখ মানুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক বিডিআরএমজিপি এফএনএফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ

শুকিয়ে যাচ্ছে প্রমত্ত পদ্মা

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
  • ১৩১ Time View

মিরন খন্দকার ।।
এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা নদীকে ঘিরে আছে নানা কথা। কিন্তু সেই পদ্মা এখন মরতে বসেছে। ৪০ বছর ব্যবধানে পদ্মা নদীর আয়তন নেমেছে অর্ধেকে। এতে পানির গভীরতার পাশাপাশি কমেছে প্রবাহ।

আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্তির আশঙ্কায় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ। হুমকিতে পড়েছে পদ্মার পুরো জীববৈচিত্র্য। ফারাক্কা বাঁধের কারণেই এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা শুকিয়ে যাচ্ছে।
এখন পদ্মার বুক জুড়ে বালুচর।

স্প্রিংগার থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘বায়োডাইভারসিটি এন্ড কনজারভেশন’ ২০২৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় উঠে আসা গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীর আয়তন কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। পানির গভীরতা কমেছে ১৭.৮ শতাংশ। প্রবাহ কমেছে ২৬.২ শতাংশ। আর মিঠা পানির সরবরাহ সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে

এ ছাড়া, পদ্মা অববাহিকায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৯.২ শতাংশ কমেছে। ১৯৮১ সালে যেখানে তাপমাত্রা ছিল ২৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক দুই ডিগ্রিতে। মূলত পদ্মার প্রকৃত অবস্থা বুঝতেই গবেষণার জন্য শুকনো মৌসুমকে বেছে নেওয়া হয় বলে জানান গবেষকরা। গবেষক দলটিতে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস মুহা. গালিব।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৮২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পদ্মার হাইড্রলজিক্যাল, জলবায়ু ও নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মৎস্য প্রজাতির সম্পর্কের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করছিলাম। এটা করতে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মার আয়তন বর্তমানে অর্ধেক কমে গেছে। এর প্রভাবে পদ্মার পুরো জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়েছে।’

রাজশাহী গোদাগাড়ী থেকে চারঘাটের সারদহ পর্যন্ত পদ্মার ৭০ কিলোমিটার অংশ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ওই এলাকার নয়টি পয়েন্টে মৎস্য প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পদ্মা পাড়ের ৭২ টি জেলে পল্লী থেকে তথ্য নেওয়া হয়। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে পদ্মার বর্তমান চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছে গবেষক দল। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন পদ্মা নদীর চেহারা পাল্টাতে শুরু করে ১৯৭৫ সালের পর। ওই বছর পদ্মার ১৮ কিলোমিটার উজানে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত। এ বাঁধ দিয়েই ভাগীরথী ও হুগলি নদীতে পানি প্রত্যাহার শুরু করে প্রতিবেশী দেশটি। এর প্রভাবে পানি কমতে শুরু করে পদ্মায়।

গবেষকরা জানান, ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে পানি প্রবাহিত হতো ৯ হাজার ৩২ ঘণমিটার। বাঁধ চালুর পর থেকে অর্থাৎ ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রবাহ নেমেছে ৫ হাজার ১৪৬ ঘনমিটারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ চালু হয়। ১৯৭৭ সালে ভারতের সঙ্গে প্রথম গঙ্গার পানি চুক্তি সই হয়। সঙ্গে যুক্ত ছিল গ্যারান্টি ক্লোজ। সামরিক সরকার এরশাদের আমলে এ চুক্তি দুবার নবায়ন হয়। ১৯৮২ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে একই বছর সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে বাদ দেওয়া হয় গ্যারান্টি ক্লোজ। যেখানে ছিল বাংলাদেশের হিস্যার ৮০ শতাংশ পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা। সবশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী যে গঙ্গা চুক্তি করা হয়, তাতেও রাখা হয়নি গ্যারান্টি ক্লোজ। চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১০ দিন পরপর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি উভয় দেশ পাবে। ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর শুকনো মৌসুমে পদ্মার প্রবাহ কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৩৩ ঘনমিটারে। বাঁধ চালুর আগে শুকনো মৌসুমে পদ্মায় প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ ঘনমিটার। কেবল শুকনো মৌসুমেই নয়, বর্ষাকালেও প্রবাহ কমেছে পদ্মায়।

ফারাক্কা চালুর আগে বর্ষায় গড় পানির প্রবাহ ছিল সেকেন্ড ১২ হাজার ১১৫ ঘনমিটার। বর্তমানে এ প্রবাহ নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৮২৭ ঘনমিটারে। গবেষকরা আরও জানান, ১৯৮০ সালে পদ্মা অববাহিকায় দৈনিক গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। ২০১৯ সালে এসে দৈনিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২ মিলিমিটারে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরিচালক (হাইড্রলিক রিসার্চ) পিন্টু কাননগোয় বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে ৬ মাস পদ্মা প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়ে। এটি দৃশ্যমান। এর প্রধান কারণ ফারাক্কা বাঁধ। তবে আরেকটি বড় কারণ পদ্মা-গঙ্গা অববাহিকায় প্রবাহ কমেছে আগের তুলনায়। উজানের উপনদী গুলোয় বাদ নির্মাণ করে পানি উত্তোলন হচ্ছে।’ ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে উল্লেখ করে নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এ সংকটের শেকড় অনেক গভীরে। পদ্মার এ রুগ্ন দশার কারণ কি, এটি সবাই বোঝে। ‘এ সংকট মোকাবেলায় অববাহিকা ভিত্তিক বাংলাদেশ ভারত ও নেপালকে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102